Team India. (Photo Source: Twitter)
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। তাই ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে ছিল ভারত। ১৯৯২-এর পর এই বিশ্বকাপেও মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে খেলেছিল ভারত। এই বিশ্বকাপটি ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা মিলে আয়োজন করেছিল।
এই বিশ্বকাপে ভারত সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে পরাজিত করার মাধ্যমে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
১. ভারত বনাম কেনিয়া (ম্যাচ ৬)
IND vs KEN. (Photo Source: Twitter)
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের প্ৰথম ম্যাচে কেনিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। কেনিয়া প্ৰথমে ব্যাটিং করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে মাত্র ১৯৯ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল। স্টিভ টিকোলো ৮৩ বলে ৬৫ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন। অনিল কুম্বলে খুব ভালো বোলিং পারফরম্যান্সের প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছিলেন।
ভারত ৪৯ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটে ২০৩ রান করে ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল। এই ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকার একটি অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। তিনি ১৩৮ বলে ১২৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তাকে এই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
২. ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ম্যাচ ১০)
IND vs WI. (Photo Source: Twitter)
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটিতেও জয় পেয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল। এই ম্যাচটিতেও প্ৰথমে বোলিং করেছিল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতীয় বোলারদের দাপটে মাত্র ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। মনোজ প্রভাকর এবং অনিল কুম্বলে যথাক্রমে ১০ ওভারে ৩৯ রান এবং ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন রিচি রিচার্ডসন। তিনি ৭০ বলে ৪৭ রান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ভারত ৩৯.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৪ রানে পৌঁছে ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল। এই ম্যাচেও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকার। তিনি ৯১ বলে ৭০ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন। কার্টলি অ্যামব্রোস এবং রজার হার্পার ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।
৩. ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (ম্যাচ ১৯)
IND vs AUS. (Photo Source: Twitter)
প্ৰথম দুটি ম্যাচ জেতার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতকে হারতে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ২৫৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। মার্ক ওয়া ১৩৫ বলে ১২৬ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন। ভেঙ্কটেশ প্রসাদ এবং ভেঙ্কটপতি রাজু ২টি করে উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচজন ব্যাটার রান আউট হয়েছিলেন।
ভারত ১৬ রানে ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল। রান তাড়া করতে নেমে ৩ ওভার বাকি থাকতেই ২৪২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল। সচিন তেন্ডুলকার এই ম্যাচেও একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন, কিন্তু তিনি দলকে ম্যাচটি জেতাতে পারেননি। তিনি ৮৪ বলে ৯০ রান করেছিলেন। ড্যামিয়েন ফ্লেমিং ৯ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ৫টি উইকেট শিকার করেছিলেন। এই ম্যাচটিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মার্ক ওয়া।
৪. ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (ম্যাচ ২৪)
IND vs SL. (Photo Source: Twitter)
এই ম্যাচটিতেও ভারত হারের মুখোমুখি হয়েছিল। ভারতীয় দল প্ৰথমে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৭১ রান করেছিল। সচিন তেন্ডুলকার এই ম্যাচেও ভালো রান পেয়েছিলেন। তিনি ৮টি চার এবং ৫টি ছয় সহ ১৩৭ বলে ১৩৭ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন। মহম্মদ আজহারউদ্দিন ৮০ বলে অপরাজিত ৭২ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন।
শ্রীলঙ্কা ৮ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেট হাতে রেখে রানের লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। সনৎ জয়সূর্য ৭৬ বলে ৭৯ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন এবং ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। হাশান তিলকরত্নে ৯৮ বলে ৭০ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এই ম্যাচে ভারতের সবথেকে সফল বোলার ছিলেন অনিল কুম্বলে। তিনি ১০ ওভারে ৩৯ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন।
৫. ভারত বনাম জিম্বাবুয়ে (ম্যাচ ২৯)
IND vs ZIM. (Photo Source: Twitter)
পরপর দুটি ম্যাচে হারার পর এই ম্যাচটিতে জয়ে ফিরেছিল ভারত। জিম্বাবুয়েকে ৪০ রানে পরাজিত করেছিল ভারতীয় দল। প্ৰথমে ব্যাটিং করতে নেমে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৭ রান তুলেছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল। বিনোদ কাম্বলি ১১০ বলে ১০৬ রানের একটি দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেছিলেন। নভজ্যোত সিধু ১১৬ বলে ৮০ রান করেছিলেন। অজয় জাদেজা ২৭ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। চার্লি লক ২টি উইকেট পেয়েছিলেন।
জিম্বাবুয়ে ৪৯.৪ ওভারে ১০ উইকেটে ২০৭ রান করতে সক্ষম হয়েছিল। ভেঙ্কটপতি রাজু ৩টি উইকেট শিকার করেছিলেন। জাভাগল শ্রীনাথ, অনিল কুম্বলে এবং অজয় জাদেজা ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। এই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন অজয় জাদেজা।
৬. ভারত বনাম পাকিস্তান (দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল)
IND vs PAK. (Photo Source: Twitter)
দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্ধি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি দারুণ জয় পেয়েছিল ভারত। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮৭ রান করতে সক্ষম হয়েছিল। নভজ্যোত সিধু ১১৫ বলে ৯৩ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন। ওয়াকার ইউনিস এবং মুশতাক আহমেদ ২টি করে উইকেট পেয়েছিলেন।
এই ম্যাচটিতে পাকিস্তানকে ৩৯ রানে পরাজিত করেছিল ভারত। পাকিস্তান ৪৯ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৮ রান করতে সক্ষম হয়েছিল। পাকিস্তান শুরুটা অসাধারণভাবে করেছিল, কিন্তু শেষমেশ জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। পাকিস্তানের দুই ওপেনার আমের সোহেল এবং সৈয়দ আনোয়ার যথাক্রমে ৪৬ বলে ৫৫ রান এবং ৩২ বলে ৪৮ রান করেছিলেন। ভেঙ্কটেশ প্রসাদ এবং অনিল কুম্বলে ৩টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। এই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন নভজ্যোত সিধু।
৭. ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (প্ৰথম সেমিফাইনাল)
IND vs SL. (Photo Source: Twitter)
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে এটি ছিল ভারতের শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচটি চলাকালীন মাঠে কিছু ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই কারণে ম্যাচটি শেষ অবধি খেলা সম্ভব হয়নি। ভারতকে এই ম্যাচটিতে খুব সহজেই পরাজিত করে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। অর্জুন রনতুঙ্গার নেতৃত্বাধীন দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫১ রান করেছিল। অরবিন্দ দি সিলভা ৪৭ বলে ৬৬ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। জাভাগল শ্রীনাথ ৩টি উইকেট শিকার করেছিলেন। অন্যদিকে, সচিন তেন্ডুলকার ২টি উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রান তাড়া করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ৩৪.১ ওভারে ৮ উইকেটে ১২০ রান তুলেছিল ভারত। এরপরেই খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই ম্যাচে ভারতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকার। তিনি ৮৮ বলে ৬৫ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেছিলেন। সনৎ জয়সূর্য দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ৭ ওভারে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট নিয়েছিলেন। এই ম্যাচে অরবিন্দ দি সিলভাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
The post ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে জেনে নিন appeared first on CricTracker Bengali.